Header Ads

Header ADS

ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি/ক্রিকেট খেলার প্রকারভেদ/ক্রিকেট খেলার নিয়ম

ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি/ক্রিকেট খেলার প্রকারভেদ/ক্রিকেট খেলার নিয়ম

                মানুষ জীবনকে উপভোগ করতে চায়, চায় আনন্দমুখর করতে। খেলাধুলা মানব জীবনে আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টিতে অত্যন্ত সহায়ক। অনেক খেলাধুলার মধ্যে বর্তমানে ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা। অনেক ব্যয়বহুল ও দীর্ঘ সময়ের খেলা হওয়া সত্বেত্ত বর্তমানে আমাদের দেশে ক্রিকেট খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আমাদের বাংলাদেশে ইতোমধ্যে পৃথিবীর সেরা দশটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশের একটির স্বীকৃতি পেয়েছে। শক্তি , সৌন্দর্য ও বিচক্ষণতায় খেলাটিতে রাজকীয় মর্যাদা দান করেছে। ফুটবল যদিও জনপ্রিয় খেলা তবু ক্রিকেটকেই বলা হয় খেলার রাজা।

                 ক্রিকেট খেলার জন্মভূমি ইংল্যান্ড। খ্রিষ্টীয় আঠারো শতকে ইংল্যান্ডের মাটিতেই প্রথম ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইংল্যন্ডের ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক সফরের মাধ্যমে বিশ্বের ক্রিকেটপ্রিয় দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। পরবর্তীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, কানাডা, কেনিয়া, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি দেশ এ খেলা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

                  ক্রিকেট খেলা তিন ধরনের। যথা - ওয়ানডে ম্যাচ অর্থাৎ এক দিনের সীমিত ওভারের খেলা, টেস্ট ম্যাচ অর্থাৎ পাঁচ দিনের খেলা এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।

                   ক্রিকেট দু দলে খেলতে হয়। প্রত্যেক দলে এগারোজন করে খেলোয়াড় থাকে। ক্রিকেট খেলার জন্য একটি কাঠের ব্যাট ও মুষ্ঠির মতো আয়তনবিশিষ্ট একটি গোলাকার কাঠের বলের প্রয়োজন হয়। মাঠের মধ্যস্থলে পরস্পরের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে বাইশ গজ দূরে এক একদিকে তিনটি করে কাঠের দন্ড পোঁতা থাকে। এ পোঁতা কাঠের দন্ডকে ক্রিকেটের পরিভাষায় ‘উইকেট’ বলা হয়। এ  উইকেটের মাথায় একটি নির্দিষ্ট মানের দুটি করে কাঠখন্ড থাকে, এগুলোকে বলা হয় ‘বেইল’। ক্রিকেট খেলা আরম্ভ হওয়ার পূর্বে টস দেওয়া হয়। যে পক্ষ টসে জয়লাভ করে সে পক্ষ সিন্ধান্ত নেয় কে আগে ব্যাট করবে। ক্রিকেট খেলা যিনি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করেন তাকে আম্পায়ার বলে। দুই পাশের উইকেটের জন্য দুজন আম্পায়ার থাকেন। তবে বর্তমানে আরও এক আম্পায়ার অন্তরালে থেকে কাজ করেন, যাকে   ‘থার্ড আম্পায়ার’ বলা হয়। একজন বোলার একাধারে ছয় বল অর্থাৎ এক ওভার এবং একদিনের খেলায় বিরতি দিয়ে দিয়ে মোট দশ ওভার বল করতে পারে। ব্যাটধারীর উইকেটের পেছনে যে দাঁড়িয়ে থাকে তাকে ‘উইকেটরক্ষক’ বলে। তাদের লক্ষ্য থাকে উইকেট ও বলের দিকে, বাকি খেলোয়াড় চতুর্দিকে নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে বল আটকাবার চেষ্টা করে। এজন্য তাদেরকে ফিল্ডার বলে।

                   প্রত্যেক বোলার সর্বদা ব্যাটসম্যনকে আউট করার চেষ্টা করেন। আবার ব্যাটসম্যান চেষ্টা করেন উইকেট রক্ষা করার। আর এভাবেই খেলা উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ফিল্ডিংয়ে থাকা দলের খেলোয়াড়রা মাঠের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় এবং বলকে সীমানা ছাড়িয়ে যেতে বাধা দেয়। তারা ব্যাটসম্যানের ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল মাটি ছুঁবার আগে শূন্যে বলটি ধরে ব্যাটসম্যানকে ‘ক্যাচ আউট’ করেন। ক্যাচ আউট ছাড়া আরও রয়েছে বোল্ড আউট, রান আউট, লেগ বিফোর উইকেট, স্ট্যাম্প উইকেট ইত্যাদি। এভাবে ব্যাটিং করা দলের দশজন আউট হলে তাদের ইনিংস শেষ হয়।


                   এক দিনের খেলার জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় নির্দিষ্ট ওভারে রানের সংখ্যা এবং কতজন ব্যাটম্যান নট আউট তার হিসাব দ্বারা। সুতরাং এ খেলায় সব সময় লক্ষ্য রাখতে হয় রান বাড়াবার দিকে এবং উইকেট রক্ষার দিকে। অন্যাদিকে টেস্ট ম্যাচে প্রতি দল দুবার ব্যাট করার সুযোগ পায়। এর মধ্যে যে দল বেশি রান করতে পারে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিপক্ষকে  আউট করতে পারে সে দলই জয়ী হয়।

                    সা¤প্রতিককালে এ খেলা সারা দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এতে অনেক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বর্তমানে দীর্ঘ সময়ের অসুবিধা দূর করার জন্য টি-টোয়েন্টি খেলা চালু করা হয়েছে। এতে প্রত্যেক দল ২০ ওভার বল খেলার সুযোগ পায়। যে দল বেশি রান করতে পারে সে দল বিজয়ী বলে ঘোষিত হয়।

                    ক্রিকেটের ইতিহাস দীর্ঘদিনের হলেও ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে ক্রিকেটের মহামিলন বিশ্বকাপ ক্রিকেট। চার বছর পর পর বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকা যৌথভাবে আয়োজন করে দশম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর।

                     স্বাধীনতা লাভের পূর্বে বাংলাদেশে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠির বৈষম্যের কারণে তেমন উন্নতি হয় নি। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৬ সালের ২৬ জুলাই বাংলাদেশ আইসিসি-র সহযোগী সদস্য নির্বাচিত হয়। সা¤প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়াসহ বড় বড় দলকে পরাজিত করেছে।
                     অন্যান্য খেলাধুলার মতো ক্রিকেট খেলাও আনন্দদায়ক ও স্বাস্থ্যপ্রদ। শরীরচর্চার দিক ব্যতীত এর অন্য একটা দিকও আছে - চরিত্র গঠন, ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, সতর্কতা, সহযোগিতা প্রভৃতি গুণ এ খেলা থেকেই লাভ করা যায়।

                     বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলোয়াড়গণ এ খেলায় ক্রমশ পারদর্শী হয়ে উঠছে। আই.সি.সি. ট্রফি জয় করে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। ক্রিড়াই জাতির শক্তি। জাতির সুস্থতা, জাতির আন্তর্জাতিক পরিচিতি এবং জাতির আনন্দের উৎস খেলাধুলায় নিহিত। আমাদের জাতীয় জীবনে খেলা হোক নির্মল, খেলা হোক শুদ্ধ। খেলার মাধ্যমে গড়ে উঠুক একটি সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধ জাতি।

No comments

Powered by Blogger.