শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসঃ
বছর ঘুরে আসে মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবসের মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগে আমাদের দুয়ারে এসে উপস্থিত হয় শোক-গভীর ১৪ ডিসেম্বর - শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। জাতির মনীষাদীপ্ত শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা এ দিবসে নিৎশেষে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে রচনা করে গেছেন বেদনা-জর্জরিত গৌরবের ইতিহাস।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঙালি বুদ্ধিজীবী নিধন বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদগন এই সুপরিকল্পিত নিধনযজ্ঞের শিকার হন। পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে এক শ্রেণির দালালরা এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার নিরীহ জনগণের ওপর পাকবাহিনীর আক্রমণের সময় থেকেই শুরু হয় বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ এবং ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের পূর্ব পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। ঢাকায় এই হত্যাকান্ড শুরু হয় এবং ক্রমে ক্রমে তা সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে, বিশেষত জেলা ও মহকুমা শহরে স¤প্রসারিত হয়। পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের অব্যবহিত পূর্ববর্তী দিনগুলোতে, বিশেষত ১৪ ডিসেম্বর এই বর্বরতা ও হত্যাযজ্ঞ ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করে। ১৪ ডিসেম্বর তাই শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস রূপে স্মরণীয় হয়ে আছে। হত্যাকারীরা বুদ্ধিজীবীদের তাদের বাড়ি থেকে গেস্টাপো কায়দায় ধরে নিয়ে প্রায়শ কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে কোনো বিশেষ ক্যাম্প বা বধ্যভূমিতে নিয়ে যেত। বেশিরভাগ সময় তারা শহরে জারিকৃত কারফ্যুর সুযোগে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেত। তাদের ওপর চলতো নির্মম দৈহিক নির্যাতন; তারপর বেয়নেটের আঘাতে তাদের দেহ ক্ষতবিক্ষত করে হত্যা করা হতো। ঢাকা শহরের প্রধান দুটি বধ্যভূমির মধ্যে একটি ছিল মোহাম্মদপুরের নিকটবর্তী রায়েরবাজারের জলাভূমি এবং অন্যটি ছিল মিরপুরে। এ দুটি বধ্যভূমিতে ডোবানালা, নিচু জমি ও ইটের পাঁজার মধ্যে বহুসংখ্যক মৃতদেহ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা এবং পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত এই লাশগুলোর অধিকাংশরই দেহ ফুলে উঠেছিল। তাদের বুকে, মাথায় ও পিঠে ছিল বুলেটের আঘাতে এবং সারাদেহে বেয়নেটের ক্ষতচিহ্ন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা অদ্যাবধি নিরূপতি হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যসূত্র থেকে শহিদদের মোটামুটি একটা সংখ্যা দাঁড় করানো যায়। এদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী এবং ১৬ জন সাহিত্যিক, শিল্পী ও প্রকৌশলী।
হানাদার বাহিনী ও দোসরদের ঘৃণ্য নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জি সি দেব, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আনওয়ার পাশা, সন্তোষ ভন্টাচার্য, সাংবাদিক-সাহিত্যিক শহীদুলাহ কায়সার, সিরাজউদ্দীন হোসেন, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, আবুল খায়ের, রাশিদুল হাসান, ডা. আলীম চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আজাদ, ডা. গোলাম মোর্তজা, আবুল বাশার চৌধুরী ও সেলিনা পারভীনসহ আরো অনেকে।
সেদিন যে অশুভ ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে এবং যে হীন উদ্দেশ্যে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বুদ্ধিজীবী নিধনে মেতে ওঠেছিল, সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তারা ভেবেছিল যে এ দেশের মানুষের দেশপ্রেম, সাহস ও প্রেরণার উৎস মেধাবী সন্তানদের হত্যা করা হলে এ জাতির আত্মশক্তির বিলোপ ঘটবে এবং তারা হবে দিকভ্রান্ত। শুভ ও সুন্দরের এবং স্বকীয়তার শক্তি হারিয়ে তারা হয়ে যাবে রিক্ত, নিঃস্ব, ভুলে যাবে মুক্ত চিন্তার পথ এবং তারা অন্ধকারের অতল গহŸরে তলিয়ে যাবে। কিন্তু হানাদর বাহিনীর সে আশা পুরণ হয়নি। কেননা বাংলাদেশের সংগ্রামী ও সচেতন মানুষ আত্মবিস্মৃত হয়নি। ভয়ের দুঃস্পপ্ন এবং হায়েনার ছোবল এ দেশবাসীর জয়যাত্রা রুখতে পারেনি। আর অমানুসিকতার পরাকাষ্ঠ প্রদর্শন করেও হানাদার বাহিনী তাদের শোচনীয় পরাজয় ঠেকাতে পারেনি।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর এবং এর আগে যেসব মহান সন্তান শাহাদৎবরণ করেছেন, তাদের প্রত্যেকেই এক একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাদের জীবন-আদর্শ এবং দেশপ্রেম আমাদের পথ দেখাবে চিরকাল। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগ ও আদর্শ আমাদের চলার পথে সাহস ও শক্তি যোগাবে সব সময়। তাদের শিক্ষা আমাদের উদার মহৎ কর্মের পথে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করবে এবং অন্যায় অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শক্তি ও সাহস যোগাবে।
বছর ঘুরে আসে মহান বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবসের মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগে আমাদের দুয়ারে এসে উপস্থিত হয় শোক-গভীর ১৪ ডিসেম্বর - শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। জাতির মনীষাদীপ্ত শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা এ দিবসে নিৎশেষে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে রচনা করে গেছেন বেদনা-জর্জরিত গৌরবের ইতিহাস।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঙালি বুদ্ধিজীবী নিধন বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংসতম ও বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ। বাঙালি শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদগন এই সুপরিকল্পিত নিধনযজ্ঞের শিকার হন। পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠীর নির্দেশনা ও মদদে এক শ্রেণির দালালরা এই হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার নিরীহ জনগণের ওপর পাকবাহিনীর আক্রমণের সময় থেকেই শুরু হয় বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ এবং ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের পূর্ব পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। ঢাকায় এই হত্যাকান্ড শুরু হয় এবং ক্রমে ক্রমে তা সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে, বিশেষত জেলা ও মহকুমা শহরে স¤প্রসারিত হয়। পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের অব্যবহিত পূর্ববর্তী দিনগুলোতে, বিশেষত ১৪ ডিসেম্বর এই বর্বরতা ও হত্যাযজ্ঞ ভয়াবহ রূপ পরিগ্রহ করে। ১৪ ডিসেম্বর তাই শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস রূপে স্মরণীয় হয়ে আছে। হত্যাকারীরা বুদ্ধিজীবীদের তাদের বাড়ি থেকে গেস্টাপো কায়দায় ধরে নিয়ে প্রায়শ কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে কোনো বিশেষ ক্যাম্প বা বধ্যভূমিতে নিয়ে যেত। বেশিরভাগ সময় তারা শহরে জারিকৃত কারফ্যুর সুযোগে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যেত। তাদের ওপর চলতো নির্মম দৈহিক নির্যাতন; তারপর বেয়নেটের আঘাতে তাদের দেহ ক্ষতবিক্ষত করে হত্যা করা হতো। ঢাকা শহরের প্রধান দুটি বধ্যভূমির মধ্যে একটি ছিল মোহাম্মদপুরের নিকটবর্তী রায়েরবাজারের জলাভূমি এবং অন্যটি ছিল মিরপুরে। এ দুটি বধ্যভূমিতে ডোবানালা, নিচু জমি ও ইটের পাঁজার মধ্যে বহুসংখ্যক মৃতদেহ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। কালো কাপড়ে চোখ বাঁধা এবং পেছনে হাত বাঁধা অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত এই লাশগুলোর অধিকাংশরই দেহ ফুলে উঠেছিল। তাদের বুকে, মাথায় ও পিঠে ছিল বুলেটের আঘাতে এবং সারাদেহে বেয়নেটের ক্ষতচিহ্ন। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা অদ্যাবধি নিরূপতি হয়নি। প্রাপ্ত তথ্যসূত্র থেকে শহিদদের মোটামুটি একটা সংখ্যা দাঁড় করানো যায়। এদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী এবং ১৬ জন সাহিত্যিক, শিল্পী ও প্রকৌশলী।
হানাদার বাহিনী ও দোসরদের ঘৃণ্য নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জি সি দেব, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আনওয়ার পাশা, সন্তোষ ভন্টাচার্য, সাংবাদিক-সাহিত্যিক শহীদুলাহ কায়সার, সিরাজউদ্দীন হোসেন, আ ন ম গোলাম মোস্তফা, আবুল খায়ের, রাশিদুল হাসান, ডা. আলীম চৌধুরী, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আজাদ, ডা. গোলাম মোর্তজা, আবুল বাশার চৌধুরী ও সেলিনা পারভীনসহ আরো অনেকে।
সেদিন যে অশুভ ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে এবং যে হীন উদ্দেশ্যে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা বুদ্ধিজীবী নিধনে মেতে ওঠেছিল, সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। তারা ভেবেছিল যে এ দেশের মানুষের দেশপ্রেম, সাহস ও প্রেরণার উৎস মেধাবী সন্তানদের হত্যা করা হলে এ জাতির আত্মশক্তির বিলোপ ঘটবে এবং তারা হবে দিকভ্রান্ত। শুভ ও সুন্দরের এবং স্বকীয়তার শক্তি হারিয়ে তারা হয়ে যাবে রিক্ত, নিঃস্ব, ভুলে যাবে মুক্ত চিন্তার পথ এবং তারা অন্ধকারের অতল গহŸরে তলিয়ে যাবে। কিন্তু হানাদর বাহিনীর সে আশা পুরণ হয়নি। কেননা বাংলাদেশের সংগ্রামী ও সচেতন মানুষ আত্মবিস্মৃত হয়নি। ভয়ের দুঃস্পপ্ন এবং হায়েনার ছোবল এ দেশবাসীর জয়যাত্রা রুখতে পারেনি। আর অমানুসিকতার পরাকাষ্ঠ প্রদর্শন করেও হানাদার বাহিনী তাদের শোচনীয় পরাজয় ঠেকাতে পারেনি।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর এবং এর আগে যেসব মহান সন্তান শাহাদৎবরণ করেছেন, তাদের প্রত্যেকেই এক একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাদের জীবন-আদর্শ এবং দেশপ্রেম আমাদের পথ দেখাবে চিরকাল। শহিদ বুদ্ধিজীবীদের ত্যাগ ও আদর্শ আমাদের চলার পথে সাহস ও শক্তি যোগাবে সব সময়। তাদের শিক্ষা আমাদের উদার মহৎ কর্মের পথে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করবে এবং অন্যায় অমানবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শক্তি ও সাহস যোগাবে।
No comments