Header Ads

Header ADS

ম্যানগ্রোভ বন কী? ম্যানগ্রোভ বনের বৈশিষ্ট্য/ বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বন

ম্যানগ্রোভ বন কী? ম্যানগ্রোভ বনের বৈশিষ্ট্য/ বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বন

               ভূমিকা ঃ সমুদ্রোপক‚লীয় এলাকায় লবণাক্ত পানি বেষ্টিত বনভূমিকে ম্যানগ্রোভ বন বলে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৫০টি প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে। আমাদের দেশের সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের উপক‚ল। এই উপক‚লীয় অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে যা দেশের সমগ্র বনভূমির প্রায় অর্ধেক।

                 ম্যানগ্রোভ বনের বৈশিষ্ট্য ঃ অন্যান্য বনভূমির তুলনায় ম্যানগ্রোভ বন অনেকটা প্রতিক‚ল ও আলাদা। নিম্নে এর বৈশিষ্ট্য উলে­খ করা হল ঃ
 উপক‚লের লবণাক্ত , কর্দমাক্ত ও জলাবদ্ধ অঞ্চলে এই বনের সৃষ্টি হয়।
 সাধারণ গাছপালার জন্য এই বনের পরিবেশ প্রতিক‚ল।
 লবণাক্ত মাটিতে গাছের শিকড় বেশ ছড়ানো হয় কিন্তু মাটির গভীরে প্রবেশ করে না।
 এবনভূমির সৃষ্টিতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব প্রত্যক্ষ।
 জোয়ার-ভাটার টানে বীজ ভেসে যায় বলে গাছে থাকা অবস্থায়ই বেশির ভাগ বীজের অঙ্কুরোদগম হয়।
 আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে এ বনকে প্যারা বন বলা হয়।

                বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বন ঃ  বাংলাদেশের সমুদ্রোপক‚লে বেশ কয়েকটি  অঞ্চলে ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে।  এর মধ্যে সুন্দরবন প্রধান এবং এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন। এছাড়া কক্সবাজারে মাতামুহুরী নদীর মোহনায় ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে যা “চকোরিয়া সুন্দরবন” নামে পরিচিত। বঙ্গোপসাগরে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিনাংশেও এ বন রয়েছে। বর্তমানে উপক‚লীয় অঞ্চলে কৃত্রিমভাবে এ বন সৃষ্টি করা হচ্ছে। নিম্নে এদের বর্ণনা দেয়া হল ঃ

                সুন্দরবন ঃ  পৃথিবীর বৃহত্তম  তিনটি ম্যানগ্রোভ  বনের মধ্যে সুন্দরবন একটি। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বন। অভ্যন্তরীণ নদী ও খাল সহ এ বনের আয়তন প্রায় ৬৪৭৪ বর্গ কি.মি.। বাংলাদেশের মোট বনভূমির ৪৭ ভাগই সুন্দর বন।
বাংলাদেশের খুলনা , সাতক্ষীরা , বাগেরহাট , বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এ ম্যানগ্রোভ বন গড়ে উঠেছে। এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী - এর নাম অনুসারে এর নামকরন করা হয়েছে। অন্যান্য বৃক্ষের মধ্যে গেওয়া, পশুর, ধুন্দল, কেওড়া, বাইন ও গোলপাতা অন্যতম।

সুন্দরবনের ভেতরে জালের মত ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য খাল ও নদী। এসব নদীতে কুমির , ভোদর , ডলফিন , কাঁকড়া এবং চিংড়ি , চিড়িং মাছ সহ প্রায় ১২০ প্রজাতির মাছ রয়েছে।

সুন্দরবনের প্রাণী বৈচিত্র্যের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হল - ডোরাকাটা দাগবিশিষ্ট রয়েল বেঙ্গল টাইগার। পৃথিবীর অন্য কোথাও এই প্রাণী আর দেখা যায় না। অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে রয়েছে হরিণ , বন্য শুকর , বন-বিড়াল ,বানর , সাপ , মৌমাছি এবং ২৭০ প্রজাতির পাখি।

বর্তমানে সুন্দরবন বিশ্বঐতিহ্যগুলোর একটি। বন বিভাগের রাজস্ব আয়ের অধিকাংশের বেশি আসে সুন্দরবনের কাঠ, জ্বালানি , গোলপাতা , মধু , মোম ও নদীর মাছ হতে।


                 চকোরিয়া সুন্দরবন ঃ কক্সবাজার জেলায় মাতামুহুরী নদীর মোহনায় অবস্থিত ম্যানগ্রোভ বনের নাম “চকোরিয়া সুন্দরবন”। এ বনের প্রধান উদ্ভিদ হলো - বাইন , ওরা , কেওড়া , গরান , হিন্তাল , গোলপাতা ইত্যাদি।

টেকনাফের কাছাকাছি নাফ নদীর তীরেও একটি ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে। এ বনের বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে সাপ , বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও মাছ রয়েছে।

                  সেন্টমার্টিন দ্বীপের ম্যানগ্রোভ বন ঃ টেকনাফ থেকে ১২ কি.মি. দূরে বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণাংশে একটি ম্যানগ্রোভ বন রয়েছে। এ বনের উদ্ভিদের মধ্যে ক্রিপা , খলশি ও ভোলা অন্যতম। এ বনের প্রাণীর মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক মাছ , কচ্ছপ ও কাঁকড়া।

                  উপক‚লীয় বনায়ন ঃ উপক‚লের প্রতিক‚ল ও লবণাক্ত মাটিতে গরান , বাইন ও কেওড়া গাছ ভাল জন্মে। তাই বর্তমানে এ অঞ্চলে এসকল গাছের চারা রোপন করে কৃত্রিমভাবে ম্যানগ্রোভ বন সৃষ্টি করা হয়েছে।

                   ম্যানগ্রোভ বনের প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতা ঃ পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ একটি দূর্যোগপ্রবন অঞ্চল। প্রতিবছরই এদেশের উপক‚লীয় এলাকায় সাইক্লোন , জলোচ্ছ¡াস , টর্নেডো ও সামুদ্রিক ঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটে। এসকল দুর্যোগ প্রতিরোধে ম্যানগ্রোভ বন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে।

                    পরিশেষ ঃ এদেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় উপক‚লীয় ম্যানগ্রোভ বন সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। তাই এ বনের রক্ষনাবেক্ষণ করা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব।

No comments

Powered by Blogger.