Header Ads

Header ADS

নীল আকাশে রাখা এক টুকরো আশা

নীল আকাশে রাখা এক টুকরো আশা-


- কি করিম ভাই , হাটে যাইতাছেন নাকি ?
- আকাশের তিন সপ্তাহ হইতে জ্বর,বুকে ব্যাথা ... ডাক্তার দেখাইলাম ।। সে নাকি রোগই খুইজা পায়না।। কি যে হইছে, আল্লাহ জানে ।।
- হ তুমি তো আমারে আগেই কইছিলা ।। এক কাম করো, পোলাডারে এইবার ঢাকা নিয়া একটা ভালা ডাক্তার দেখাও ! আমার একজন পরিচিত ডাক্তার আছে ।।তুমি কইলে আমি হের লগে তোমারে কথা বলাই দিমু নে ।। বেশ ভালা ডাক্তার ।।
- আচ্ছা দিয়েন তাইলে ।। দেখি তাইলে যামু আবার হাতে টাকাও নাই ।। সামনে আবার ঈদ ।।মাইয়াটা তো গরু দিমু নাকি ছাগল দিমু নিয়া বারবার জিগাইতাছে ।।
- দেখ তাইলে তয় বেশি দেরি কইর না ।।
------------------------------
- আলেয়া ও আলেয়া কই গেলি রে মা ...
- হা মা ...কিছু কইবা ।।
- কই গেছিলি ?
- শামিমার বাড়ি ।। জানো মা শামিমারা একটা লাল গরু কিনছে ।। আমরা কি কিনবা মা , গরু নাকি ছাগল ?
- জানি না রে মা ।। আমার পোলাডার যে কি হইল ? প্রতিবছর কোরবানি নিয়া হের কত খুশি ।।সবার আগে গরু নাইলে ছাগল কিনতে হইব , হাটে যাইতে হইব আর এইবার আমার সেই পোলাডা বিছানায় পইরা রইছে ।।
- কাইন্দ না মা ।।দেইখ ভাইয়া ঠিক সুস্থ হইয়া যাইব ।।
- তাই যেন হয় মা ।। যা তোর ভাইয়ের পাশে যাইয়া বস, কথা বল ।। আমি একটু কাম করি ।।তোর বাপ আবার হাট থেকে আইসা পরবে ।।
- মা কাল আব্বা কইল হুনলাম এবার নাকি আমরা কোরবানি দিব না ।। সবাই দিবে তাইলে কি আমরা চাইয়া চাইয়া দেখুম ।।
- চুপ থাক, ভাই যে একটা রোগে বিছনায় পইড়া রইছে খবর আছে কোন? হেয় আছে কোরবানি নিয়া ।।
- তুমিতো খালি আমার লগেই পারো , লাগবোনা কিছু যাও!
আলেয়া ঘরে চলে গেলো, বয়স এই আর কত হবে পনেরো পার হয়ে ষোল! এই বয়সে মেয়েরা সবচাইতে কল্পনা বিলাসী হয়, চোখে মুখে ঠোটে আবেগে পরিপূর্ণ থাকে, এককথায় মায়াবতী! কথা শুনলে যে কেউ মায়ায় পড়ে যাওয়ার মতো অবস্হা।
-------------------------------------------
- আলেয়া কই আছিরে রে বইন ।।
- এইতো ভাইয়া মায়ের কাছে ।। তোমার কিছু লাগবে ।।
- একটু পানি দিতে পারবি ?
- দিতেছি, তুমি উইঠো না!
আলেয়া পানি নিয়ে এসে আকাশের পাশে বসল ।।
- আলেয়া তুই কি আমার উপর রাগ ?
- কেন ভাইয়া ।।
- না এই যে এবার আমার জন্য এখনো কোরবানির গরু/ছাগল কিছুই কেনা হয়নাই ।।
- দূর ভাইয়া এসব কি বল ।। দেইখ তুমি ঠিক সুস্থ হইয়া যাবা আর আমরা ঠিক সবার বড় গরু দিয়া কোরবানি দিমু আর এবার না দিতে পারলে তাতে কি সামনের বার দিমু ।।
- আলেয়া আমার মনে হয়কি জানিস আমি মনে হয় আর বাচমু না ।।
- খবরদার ভাইয়া, আর কোনদিন এই কথা ভুলেও মুখ দিয়া আনবানা, আব্বা শুনলে কত কষ্ট পাইবো জানো, তোমারে আব্বা এখনো তার চ্যাম্পিয়ন বইলা ডাকে! কত মেধাবী ছাত্র ছিলা তুমি! নিজে কি সেইটা জানো??
- ভালোই বড় হইছোস, ভাইরে কেমনে সান্তনা দিতে হয় সবই শিখছোস!
- তা তো শিখবই, তোমার বইন না আমি!
- একটা গান গাইবি বোন, ওই যে ওই গানটা "যদি মন কাঁদে "
- মনে পড়ে ভাইয়া তুমি না এই গানটা কলেজে একবার গাইছিলা! দাড়াও শুনাচ্ছি.....
আলেয়া গান ধরলো, মনে হলো তার কন্ঠে সুরের বন্যা বইছে.....
যদি মন কাঁদে, তুমি চলে এসো, চলে এসো ।। এক বর্ষায়
এসো ঝরঝর বৃষ্টিতে , জলভরা দৃষ্টিতে ।।
আলেয়া গান গাইছে ।।ওর দু'চোখে পানি ।। নাহ, দু'চোখ না ।। দু"চোখ আর দু"চোখ মিলিয়ে চারচোখে পানি, আর বাইরে বৃষ্টি ।।ঝুম বৃষ্টি ।।
------------------------------------------
- দেখছো আলেয়ার মা, বোন ভাইরে কি সুন্দর গান শুনাইতেছে!
- আরে আপনে আইছেন? কই ছিলেন? কি খাইছেন, আমি চিন্তায় শেষ, মাইয়ারে কইলাম তোর বাপ সকালে বের হইছে, একটু খোজ নে! ফাজিল মাইয়া গরু কিনবেন না ছাগল কিনবেন সেইটা নিয়া পইরা রইছে! এহন আবার গান গাইতেছে! কোন চিন্তাই নাই! আমার এতো অশান্তি আর সহ্য হয়না!
- আহ্ আলেয়ার মা! বাচ্চা মাইয়া, সামনে একটা ঈদ আইতাছে, ও আনন্দ না করলে কে করবো?
- টাকা আছে আপনার কাছে? পোলাডার চিকিৎসা করাইবেন না নাকি!
- আরে তুমি এতো চিন্তা কইরো না, আল্লাহ সব দেখবো, সবই ঠিক ঠাক মতো হইবো! আমার চ্যাম্পিয়ন এর কিছু হইবোনা, ভালো হইয়া যাইবো, ঈদের পরেই ঢাকা নিয়ে যামু, বড় ডাক্তারের ঠিকানাও লইছি!
- ভালা হইলেই ভালা, ভাত দিতাছি আপনারে হাত মুখ ধুইয়ে আসেন!
-----------------------------------------
আজ করিম সাহেবের চোখে মুখে অনেকদিন পর স্বস্তির পরশ দেখা গেলো। তার সাধ্যের মধ্যে এবারের ঈদের জন্য একটি গরু কিনতে পেরেছেন!
- আলেয়া, আলেয়া? আলেয়ার মা? আরে কই গেলা সব? দেখো কি নিয়ে আসছি, হাহাহা বলেছিলাম না আল্লাহ সব দেখবো! এইবার আমার ছেলেটারেও ডাক্তার দেখামু ইনশাআল্লাহ!
---------------
( ঈদের দিন সকাল )
- কার কার নামে কোরবানি দিবেন
- আমার ছেলে আর মেয়ের নামে ।। এই দুই ভাগে দিমু ।।
- ওহ শুনছিলাম আপনার ছেলে নাকি অসুস্থ ।।এখন কি অবস্থা ?
- কাল রাত থেকে অসুস্থতা একটু বাড়ছে ।। ঈদ এর পর ঢাকা নিয়া যামু ।।
- ইনশাআল্লাহ ভাল হয়ে যাবে ।। আসেন কোরবানি করি ।।
" আল্লাহু আকবর"
হঠাত একটা চিৎকার এ ভারী হয়ে গেলো পরিবেশটা! চিৎকারটা আর কারো নয় ।। করিম সাহেবের স্ত্রীর ।।
" আকাশরে , বাপজান রে ।।কি হইছে তোর , কথা বল বাবা, কথা বল ।।
নাহ আকাশ আর কথা বলেনি ।।
---------------------------------
শুনা যায় সেইদিনের পর থেকে আর সবার জন্য প্রতিবছর ঈদ আসলেও করিম সাহেবের পরিবারে আর কোনদিন ঈদ আসেনা,কেমন জানি মাথা পাগলের মতো হয়ে গেছেন করিম সাহেব, আলেয়ার ও আর ইচ্ছে হয়না বায়না ধরার, শুধু মুখ লুকিয়ে কাঁদে! আলেয়ার মা পুত্র শোকে অসুস্হ হয়ে একসময় প্যারালাইজড হয়ে যায়!
পুত্র হারানোর মতো এমন বড় দ্বিতীয় কোরবানি আর মনে হয় এই পৃথিবীতে হয়না!

আরো পড়ুন
মানুষের রূপের আর শেষ নেই
হাসি এবং কান্নার প্রেমের গল্প/ গার্লফ্রেন্ড নিয়ে প্রথম ট্যুর..........

No comments

Powered by Blogger.